Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

শিরোনাম
বার্মিজ মার্কেট
স্থান
কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদ হতে ৪ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত।
কিভাবে যাওয়া যায়
কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদ হতে ৪ কিলোমিটার দুরে এই বার্মিজ মার্কেট।যেকোন যানবাহন দিয়ে যাওয়া যায়।
বিস্তারিত

১৯৬২ সালে এক রাখাইন উদ্যোগী মহিলা উনাং, টেকপাড়াস্থ বার্মিজ প্রাইমারী স্কুল সংলগ্ন তার নিজ বাড়ীতে খুবই ছোট পরিসরে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত রাখাইন হস্তশিল্পের কিছু মালামাল-চাদর, কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ, চুরুট, পুরুষদের লুঙ্গি আর টুকিটাকি জিনিস পত্রের পসরা সাজিয়েছিল।
কক্সবাজার বেড়াতে আসা দেশী বিদেশী পর্যটকরা এখানে ভিড় করতো। সেখান থেকেই আজকের এই সর্বজন স্বীকৃত বার্মিজ স্টোরের সুচনা।
পর্যটকদের চাহিদা অনুধাবন করে তিনি “কক্সবাজার কটেজ ইন্ডাস্ট্রিজ” নামে বাণিজ্যিকভাবে একটি স্টোর খোলেন নিজ বাড়ীর সামনে, তারপর একে একে গড়ে উঠে টিন টিন বার্মিজ স্টোর, রাখাইন স্টোর, উমে স্টোর, নূরানী এম্পোরিয়াম, বিবি ফ্যাশন ডায়মন্ড স্টোর প্রভৃতি। যা বার্মিজ স্টোর হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে থাকে। যদিও শুরুতে স্টোরগুলোতে বার্মিজ কোন পণ্য ছিল না। পরবর্তীতে বার্মিজ পণ্য যেমন- লুঙ্গি, থামি, সেন্ডেল, আচার, বাম জাতীয় ভেসজ, স্নেখা- এক প্রকার প্রসাধন, বিভিন্ন জাতের পাথর এবং বার্মিজ হস্তশিল্পের- কাঠের ও ঝিনুকের তৈরী বিভিন্ন সৌখিন জিনিস সংযোজন হতে থাকে এবং “বার্মিজ স্টোর” নামের পরিপূর্ণতা লাভ করে।
খুবই স্বভাবিক অর্থেই বার্মিজ স্টোর বলতে বার্মিজদের দোকান এবং বার্মিজ পণ্য সামগ্রীর দোকান হিসেবে সবাই ধারণা করে থাকে। স্টোরগুলোতে বার্মিজ পণ্য সামগ্রী ঠিকই থাকে তবে দোকানীরা বার্মিজ নয়। এরা আরকানিজ বংশোদ্ভুত রাখাইন জাতি গোষ্ঠী। জাতিগত এবং সাংস্কৃতিকভাবে রাখাইনদের সাথে বার্মিজের প্রচুর মিল রয়েছে বৈকি। তবে ভাষাগত ভিন্নতা রয়েছে।
স্টোরগুলোর আরও একটি বৈশিষ্ট হলো- বেশীর ভাগ স্টোর পরিচালিতগয় মহিলাদের দ্বারা। যারা ঐতিহ্যগত বেশে নিজেদের সাজিয়ে রাখে। যা পর্যটকদের আকর্ষণের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। কোন পর্যটক কক্সবাজার এলে বার্মিজ স্টোরে একবার ঘুরে আসবে না, স্টোর থেকে কিছু কেনাকাটা করবেনা তা কি হয়।
মনস্তাত্তিকভাবে বিদেশী পণ্য বা ভিন্ন সংস্কৃতির পণ্যের প্রতি, মানষের প্রতি যে কারোরই আলাদা আকর্ষণ থাকবে বৈকি। তাইতো পর্যটন মৌসুমে বার্মিজ স্টোরগুলো সন্ধ্যা হওয়ার সাথে সাথে পর্যটকদের মিলন মেলায় পরিণত হয়। বেচা বিক্রির ধুম পড়ে যায়। দোকানীরাও আয় করেন প্রচুর।
বর্তমান বার্জিজ স্টোরগুলোর ব্যাপ্তি অনেক বেড়েছে। পণ্যের সম্ভারও বেড়েছে অনেক। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ার উৎপাদিত পণ্যের মাঝে হারিয়ে যাচ্ছে রাখাইনদের সেই ঐতিহ্যগত হস্তচালিত তাঁতে বোনা পণ্য সামগ্রী, চাইনিজ পণ্যের প্রাচুর্যতায় আসল বার্মিজ পণ্য বিলুপ্তির পথে। যদিও সীমিত কিছু বার্মিজ পণ্য আজও বার্মিজ স্টোরে চোখে পড়ে।
যেখানে সীমিত সংখ্যক রাখাইন মহিলা উদ্দ্যোক্তা যে ভাবধারায় বার্মিজ স্টোরের সুচনা করেছিল, যুগের বিবর্তনে আজ শত শত বার্মিজ স্টোর হয়েছে, স্টোরগুলোতে রাখাইন বা বার্মিজ পণ্যের প্রাচুর্যতা নেই বললেই চলে। ধীরে ধীরে এক সময়কার আকর্ষণীয় বার্মিজ স্টোরের প্রতি পর্যটকদের আকর্ষণও কমে গেছে অনেক, কমে গেছে কেনা বেচার হারও।
রাখাইনদের পাশাপাশি অনেক মুসলিম-হিন্দু ব্যবাসায়ী শপিং মল নির্মান করেই তা বার্মিজ স্টোর বা বার্মিজ মার্কেট বলেই প্রতিষ্ঠিত করেছে। এদের সংখ্যাই এখন সবচেয়ে বেশী। কিছু রাখাইন ব্যবসায়ী এখনো হাতে গোনা কিছু বার্মিজ স্টোর পরিচালনা করে চলেছে। স্রেফ জীবিকার তাগিদে যার মধ্যে মূল ধারার বার্মিজ স্টোরের রূপ খুঁজে পাওয়া সত্যিই দূরূহ।
তবুও খ্যাতিতে এখনও টিকে রয়েছে কক্সবাজারের বার্মিজ মার্কেট। দেশ বিদেশেও এই মার্কেটের কথা ছড়িয়ে পড়েছে। দেশী বিদেশী পর্যটকগণও এখনও স্মরণ করেন ঐতিহ্যবাহী এই মার্কেটের।